Facts about dr radhakrishnan biography in bengali
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ
ভারতরত্ন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ | |
---|---|
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ | |
কাজের মেয়াদ ১৩ মে, ১৯৬২ – ১৩ মে, ১৯৬৭ | |
পূর্বসূরী | রাজেন্দ্র প্রসাদ |
উত্তরসূরী | জাকির হুসেন |
কাজের মেয়াদ ১৯৫২ – ১৯৬২ | |
জন্ম | ৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮ তিরুতণি,তামিলনাড়ু, দক্ষিণ ভারত |
মৃত্যু | ১৭ এপ্রিল, ১৯৭৫ চেন্নাই, ভারত |
রাজনৈতিক দল | স্বাধীন |
সন্তান | পাঁচ জন মেয়ে এবং এক জন ছেলে |
পেশা | রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, অধ্যাপক |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
পুরস্কার | ভারত রত্ন(১৯৫৪) |
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ( তেলুগু: సర్వేపల్లి రాధాకృష్ణ; তামিল: சர்வேபள்ளி ராதாகிருஷ்ணன் ; ৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮– ১৭ এপ্রিল, ১৯৭৫) ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এছাড়াও তার আগে সর্বপল্লী ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য এবং ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় উপাচার্য ছিলেন। রাধাকৃষ্ণণ তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব দর্শনে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং বিশিষ্ট পণ্ডিতদের একজন হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি ১৯২১ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক এবং নৈতিক বিজ্ঞানের রাজা পঞ্চম জর্জ চেয়ার এবং ১৯৩৬ থেকে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইস্টার্ন রিলিজিয়ন অ্যান্ড এথিক্সের স্প্যাল্ডিং চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পরপর দুই মেয়াদে উপ-রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং পরে এক মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং ভারতের সবচেয়ে সংকটময় সময়ে তিনি (চীন ও পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধকালীন ) প্রধানমন্ত্রীদের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার জন্মদিন ৫ সেপ্টেম্বর ভারতে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। [১][২][৩]
সাফল্য
[সম্পাদনা]সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ স্বাধীন ভারতের প্রথমউপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয়রাষ্ট্রপতি ছিলেন।প্রতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর, ভারতে শিক্ষক দিবসরূপে পালিত হয়।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি (১৯৫২-১৯৬২) এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি(১৯৬২-৬৭) ছিলেন। একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও অধ্যাপক এই শান্ত মানুষটি ছাত্রজীবনে অতি মেধাবী ছিলেন। জীবনে কোনো পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি। বিভিন্ন বৃত্তির মাধ্যমে তার ছাত্র জীবন এগিয়ে চলে। ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার বিষয়টি ছিল ‘বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা’(The Ethics of blue blood the gentry Vedanta and its Metaphysical Presuppositions)।
তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা সচ্ছল ছিল না। দূর সম্পর্কের এক দাদার কাছ থেকে দর্শনের বই পান এবং তখনই ঠিক করেন তিনি দর্শন নিয়ে পড়বেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার জন্য তিনি "বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা " (The Ethics fanatic the Vedanta and its epitome Presuppositions) বিষয়ে একটি গবেষণা মূলক প্রবন্ধ লেখেন। তিনি ভেবেছিলেন তার গবেষণামূলক প্রবন্ধ দর্শনের অধ্যাপক বাতিল করে দেবেন। কিন্তু অধ্যাপক অ্যালফ্রেড জর্জ হগ তার প্রবন্ধ পড়ে খুবই খুশি হন। এই প্রবন্ধ যখন ছাপানো হয় তখন রাধাকৃষ্ণণ এর বয়স ২০ বছর।[৪]
বিশ্বের দরবারে তিনি অতি জনপ্রিয় দার্শনিক অধ্যাপক হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৩১ সালে তাকে British knighthood-এ সম্মানিত করা হয়। ১৯৫৪ তে ভারতরত্ন উপাধি পান।
প্রথম জীবনে তিনি মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেন (১৯১৮)। এসময় তিনি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পত্রিকায় লিখতেন। সে সময়েই তিনি লেখেন তার প্রথম গ্রন্থ ‘The Philosophy staff Rabindranath Tagore’। দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘The Reign of Religion in Parallel Philosophy’প্রকাশিত হয় ১৯২০সালে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। দেশ–বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বারবার অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধুরা তার জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেন ‘আমার জন্মদিন পালন না করে ৫ই সেপ্টেম্বরকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হলে তা হবে আমার গর্বের বিষয়।’[৫] এরপর থেকে তার জন্মদিন ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়।[৬]
ড.
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের কয়েকটি বাণী[সম্পাদনা]
- রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি নন, তিনি আধ্যাত্ম প্রেমী মানবতাবাদী ও প্রগতিবাদী।সাধারণভাবে একজন কবি হন মানবতাবাদী আধ্যাত্মবাদী কিন্তু রবীন্দ্রনাথ জীবনের মধ্যে আধ্যাত্মবাদ খুঁজেছেন আবার সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের বিষয়গুলো তার দৃষ্টি এড়ায় নি।[৭]
- শহরের সভ্যতার পূর্ণমাত্রায় আমরা অনেকে অহংকারী হয়ে উঠেছি। আমাদের গ্রামের সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটছে। এরকম হতে দেওয়া উচিত নয়। এই বিশ্ব নানা জাতি ও নানা মতের মানুষের বাসস্থান। সবারই উচিত অন্যের সংস্কৃতিকে সম্মান জানানো। বিশ্বসংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য অবশ্যই চাই আঞ্চলিক সংস্কৃতির উন্নয়ন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
- দেশের অগ্রগতির জন্য গণতন্ত্রের পিঠ মজবুত করা দরকার। গণতন্ত্র ছাড়া ভারতের সামগ্ৰিক উন্নতি সম্ভব নয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
-ভারতবর্ষের অন্তর আত্মার জীবন্ত প্রতীক স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক ও পরমাতত্মিক জীবনের সমগ্রতার প্রতীক। বিবেকানন্দের সমগ্র জীবনে ভক্তগীতে জ্ঞানীগুণী মানুষের সম্মেলনে তাঁদের দর্শন চিন্তায় সব মানুষের প্রার্থনার ফলে হয়তো আমাদের শাশ্বত ভারত আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
- মানুষের কর্মজীবনে সকলের প্রতি উদার ও সমান দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত। আমরা আর্ত মানুষের সেবা করতে পারি।মানবসেবার মাধ্যমে আমাদের জীবন সার্থক ও অর্থপূর্ণ হবে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
- শৃঙ্খলিত ভারতবর্ষের অন্ধকার জীবনের মাঝে ঈশ্বরের নির্মল জ্যোতি রূপে যে মনীষীর আবির্ভাব ঘটেছিল তিনিই মহাত্মা গান্ধী। তিনি বরণ করেছিলেন দুঃখ ও ক্লেশকে। তার সত্যাগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সীমাহীন ধৈর্য। শঙ্কাহীন আত্মা,প্রবল ইচ্ছা শক্তি সৎ এবং ন্যায়ের মধ্যে আবেগ গান্ধী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
- মানুষের আধ্যাত্ম জীবনে যে আনন্দ আমরা পাই তার কাছে জীবনের জাগতিক সুখ কোন কিছুই নয়। আমরা সব সময় যেন মায়ার জগতে বাস করছি। আমাদের জাগতিক সুখকে পারমাত্মিক সুখ বলে ভুল করি। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
যদুনাথ সিংহের সঙ্গে মোকদ্দমা
[সম্পাদনা]১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে অধ্যাপক যদুনাথ সিংহ ভারতের সারস্বত সমাজকে নাড়িয়ে দিয়ে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের বিরুদ্ধে থিসিস চুরির অভিযোগে কলকাতা উচ্চআদালতে মামলা করেন। যদুনাথ সিংহ প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তির জন্য যে গবেষণাপত্রটি ইন্ডিয়ান সাইকলজি অব পারসেপশন প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড জমা দিয়েছিলেন, সেই গবেষণাপত্র থেকে ব্যাপকভাবে টুকে ধরা পড়েছিলেন রাধাকৃষ্ণণ।
১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল রাধাকৃষ্ণণের সাড়া জাগানো বই "ইন্ডিয়ান ফিলজফি"র দ্বিতীয় খণ্ড, যা ছিল ডঃ যদুনাথ সিংহের গবেষণাপত্রটির পুনর্মুদ্রণ। ডঃ সিংহ এই চুরির বিষয়টি জানতে পারেন যখন ১৯২৮ সালে রাধাকৃষ্ণনণের দ্য বেদান্ত অ্যাকর্ডিং টু শংকর অ্যান্ড রামানুজ নামে আরো একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইটি ছিল রাধাকৃষ্ণণের ইন্ডিয়ান ফিলজফি দ্বিতীয় খণ্ডের অষ্টম এবং নবম অধ্যায়ের একটি স্বতন্ত্র পুনর্মুদ্রণ। সেই বইটি থেকেই যদুনাথ সিংহ সবিস্ময়ে জানতে পারেন যে তার গবেষণার প্রথম দুটি অধ্যায় থেকে অনেক অনুচ্ছেদ খ্যাতনামা অধ্যাপক রাধাকৃষণ চুরি করেন।
ডঃ সিংহ মর্ডান রিভিউ পত্রিকায় রাধাকৃষ্ণণের এই চৌর্যবৃত্তির ইতিবৃত্ত তুলনামূলক ভাবে প্রকাশ করেন। সিংহপুরুষ যদুনাথ সিংহ মরিসন রিভিউ পত্রিকার মাধ্যমে ও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে রাধাকৃষ্ণণের মতো মহান মানুষের প্রকৃত মুখোশ খুলে দেন। কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলাটির রায় না বের করেই মামলার স্থগিতাদেশ দিয়ে দেন।